স্বদেশ ডেস্ক:
করের বোঝা নয়, আওতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর এ লক্ষ্য সামনে রেখে পরিকল্পনা করেছে এনবিআর। বিশেষ করে শহরের বাড়িওয়ালাদের করের আওতায় আনা হচ্ছে। নতুন করদাতা সংগ্রহে রাজধানীসহ শহরের বাড়ির মালিকদের করের আওতায় আনার লক্ষ্যে পুলিশের ডেটাবেজ ব্যবহারের চিন্তা করছে এনবিআর। অপরাধীদের শনাক্ত করতে পুলিশের তৈরি করা এই ডেটাবেজে বাড়ির মালিকদের তথ্য রয়েছে।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলায় আয়কর, ভ্যাটমেলার পাশাপাশি আয়কর ক্যাম্প করার পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থাটি। আর এই উদ্যোগে জেলা প্রসাশক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি যেমন- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সহায়তা নেওয়া হবে। এমনকি কর সচেতনতা বাড়াতে ইউনিয়ন পর্যায়েও আয়কর ক্যাম্প করার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
এ বিষয়ে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, আয়কর অধ্যাদেশের ১৮৪ ধারার ‘ই’ উপধারায় বলা আছে, কর কর্তৃপক্ষ সরকারের অন্য কোনো সংস্থার কাছে সহায়তা চাইলে তারা তা প্রদান করবে। তাই বাড়ির মালিকদের তথ্য পেতে আমরা পুলিশের ডেটাবেজ ব্যবহার করতে পারি। এখান থেকে আমরা কারা বাড়ির মালিক, ওই তথ্য সহজে পেয়ে যাব।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ৪১ লাখ হলেও রিটার্ন দাখিল করেন মাত্র ২১ লাখ। এই ২১ লাখের মধ্যে আবার ১০ শতাংশ কোন কর দেন না অর্থাৎ তারা ‘জিরো রিটার্ন’ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের অন্যতম রাজনৈতিক নির্দেশনা করজাল বাড়ানোর পাশাপাশি কর ভিত্তি সম্পসারণ। ইতোমধ্যে কর জিডিপি রেশিও বাড়ানোর ব্যাপারে অনুশাসন দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। আর অর্থমন্ত্রী এক কোটি করদাতা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে চলতি বছরে এনবিআর ৬ লাখ ৭২ হাজার নতুন করদাতাকে করনেটে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। এ জন্য ২১৩টি জরিপ টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে ন্যূনতম ৫ সদস্য আছেন। তাদের মধ্যে ২ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী রয়েছেন। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৫টি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। প্রাপ্ত জরিপের ভিত্তিতে ৩ লাখ ৩১ হাজার ২৭২ টিআইএন বরাদ্দ করে আয়কর নির্ধারণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে কর মামলা নিষ্পত্তি করে প্রায় ২৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭ হাজার ১০৪ টাকা কর আহরণ করা হয়েছে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইয়া বলেন, অত্যন্ত সুকৌশল ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করছে এনবিআর। সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে একটি সুখী, সমৃদ্ধ শিক্ষিত, শক্তিশালী, স্বাবলম্বী ও উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ জোরদার করার বিষয়ে এনবিআর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে জনগণের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি করজাল বিস্তারে কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কর জরিপ কার্যক্রম জোরদার করার ব্যাপারে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।